ফ্লাইং কার বা উড়ো-যান

নভেম্বর ২৬, ২০১৭

উড়ুক্কু মাছ কিংবা উড়ুক্কু সাপ এর কথা আমরা সবাই আগে শুনলেও, উড়ুক্কু গাড়ির কথা কজনেই বা শুনেছি। না, এ গাড়ি উড়োজাহাজ নয়, এটা আমরা প্রতিনিয়ত রাস্তায় চলতে দেখা প্রাইভেট কার!

উড়ার স্বপ্ন মানুষের সেই অনেক আগে থেকেই। প্রতিটা মানুষই তার জীবনে অন্তত একবার একজোড়া পাখার স্বপ্ন দেখে, যার সাহায্যে সে উড়তে পারবে। আর এই স্বপ্ন থেকেই মানুষ উড়োজাহাজ, রকেট সহ আরো নানা যান তৈরি করেছে। কিন্তু তাও মানুষের উড়ার স্বপ্ন টা পরিপূর্ণতা পাইনি।

সেই পরিপূর্ণতা পেতে হয়তো আরো সময় লাগবে, কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে তাল মিলিয়ে অতি শীঘ্রই নতুন আর একটি সম্ভাবনা যুক্ত হতে চলেছে এই স্বপ্ন পূরণে যা একাধারে মানুষের উড়েবেড়ানোর স্বপ্ন পুরণে আরো এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এনে দিবে সাচ্ছন্দ্য। আর সেই সম্ভাবনার ক্ষেত্র টি আর কিছুই নয়, FLYING CAR উড়ুক্কু গাড়ি।

সেই ১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ড ‘স্কাই ফাইবার’’ নামক একজন ব্যাক্তির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ছোট একটি পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ আকাশে উড়িয়ে সবার নজরে আসেন। সেই যানটি উড়োজাহাজ হলেও তা সবাইকে ধারণা দেই যে ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য অল্প খরচে সাধারণ মোটর যানের মত উড়োজাহাজ তৈরি করা সম্ভব, যা মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। কিন্তু তার সেই পরীক্ষা কার্যক্রমটি দুইবছরের মাথায় যানটির দুর্ঘটনার কারনে ভুপাতিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়। তবে সেই পরীক্ষা আশার আলো দেখাতে না পারলেও তিনি এই বলে ভবিষ্যৎ বাণী করে যান যে, “আপনারা হয়ত শুনে হাসবেন তবে এমন একদিন আসবে যেদিন এমন একটি যান আবিষ্কার হবে যা প্রাইভেট কার এবং উড়োজাহাজের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ সৃষ্টি করবে।‘

তার পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং সংস্থা যেমন গাড়ি নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান ফোর্ড, এয়ারক্রাফট নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান হিলার হেলিকপ্টারস, আমেরিকান ও সোভিয়েত সামরিক বাহিনী সহ অন্যান্যরা এই ধরণের উড়োযান নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা চালানো শুরু করে। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালে করা হেনরি ফোর্ড এর সেই ভবিষ্যত বানী আজ সত্যি হতে চলছে।

২০১৩ সালের ৭ মে, টেরাফুগা (Terrafugia) টেরাফুগা ট্রানজিশন (Terrafugia Transition) নামে প্রথম রাস্তায় চলাচলে সক্ষম একটি উড়োযান জণসাধারণ এর সামনে নিয়ে আসে। এই গাড়িটি একবারে প্রায় ৫০০ মাইল (৮০০ কিমি) বিনাবাধায় চলতে সক্ষম, এবং এই ব্যাটারিচালিত এই গাড়িটি চলার সময় তার ইঞ্জিন থেকে শক্তি সঞ্চয়ও করতে পারে। এছাড়াও দুইজন ব্যাক্তির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই গাড়িটিতে সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা যুক্ত থাকবে।

কিছুটা প্রাইভেট কার, এবং কিছুটা উড়োজাহাজের মত দেখতে এই উড়ো-গাড়ির দুইপাশে দুইটি পাখা সংযুক্ত থাকে। চালক চাইলে পাখাদুটিকে সংকুচিত করে গাড়ির মূল বডি এর সাথে এক করে ফেলতে পারবেন, এবং তার ফলে গাড়িটি অন্য সাধারণ গাড়ির পাশাপাশি রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। দেখতে কিছুটা অদ্ভুত হলেও এই গাড়িটি উড্ডয়নে মাত্র এক মিনিট সময় নিবে, যা কিনা আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিবে। চালানোর সময় চালক বা পাইলট গাড়িটির সাহায্যে সর্বোচ্চ ১০০ কিমি/ ঘন্টা গতি তুলতে পারবেন এবং একে সর্বোচ্চ ১০০০ ফুট উপরে তুলতে সক্ষম হবেন।

এই উড়ো-গাড়িটি চাইলে আপনিও চালাতে পারবেন। এর জন্য বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরবে না। ব্যাক্তিমালিকানার এই গাড়িটির কন্ট্রোল প্যানেল অনেকাংশেই সাধারণ গাড়ির মত হবে। আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তাহলে একটি ২০ ঘন্টার প্রশিক্ষণ এর মধ্য দিয়ে আপনি এই গাড়ি চালানোর অনুমতি লাভ করতে পারেন। অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এই উড়ো-গাড়িটি কিনতে চাইলে আপনাকে প্রাই ২৭৯,০০০ আমেরিকান ডলার খরচ করতে হবে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার কাছাকাছি। অসম্ভব ব্যয়বহুল হলেও এটা বলা যায় যে, প্রযুক্তির আধুনিকায়নে অদূর ভবিষ্যতে এই কার সর্বসাধারণের হাত এর নাগালে চলে আসবে।

এটিই প্রথম আবিষ্কার যাকে আমরা উরুক্কু গাড়ি কিংবা উড়োযান বলে গ্রহণ করতে পারি। তবে এই গাড়িটিকে তারা পরীক্ষামূলকভাবে নিয়ে আসলেও এখনও এর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে ২০১৯ সালের মধ্যে এই উড়ো-গাড়িটিকে তারা বাজারে সকলের জন্য উন্মুক্ত করবে।

Azad Likhon
Tech Writer